মঙ্গলবার , ৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে যা রয়েছে

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল রোববার সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেখানে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে নতুন সংবিধান, সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করে এক অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছিলাম। আমাদের সুস্পষ্ট এক দফা দাবি ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই। কেবল এক ফ্যাসিবাদী শাসক হটিয়ে আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উত্থানের সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখে আমরা নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরতে পারিনি; বরং রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে এনসিপি।

দলটির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধান ও তৎপরবর্তী বাকশালী অপশাসন, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ছিল মানুষের এই সুদীর্ঘ ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি নিষ্ঠুর প্রতারণা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি একমুখী ও স্বেচ্ছাচারী মতবাদ। তারপর রাষ্ট্র গঠনের নানা চড়াই-উতরাই পেরোলেও স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও এমন একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি; যা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।

ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার পতনের ডাক দিয়েছিলাম।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, এনসিপির জন্ম, আমাদের সকল শ্রম আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক একবছর পর আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে, একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের দ্বিতীয় রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করছি।

ইশতেহারে যা রয়েছে– ১. গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করা হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হবে।

২. জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যাসহ শাপলা চত্বর হত্যকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ আওয়ামী লীগের আমলে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।

৩. রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ জবাবদিহি নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন ও এর গঠন প্রক্রিয়ার মৌলিক পরিবর্তন সাধন করা হবে। নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের বিষয়ে আইন করা হবে।

৪. ঔপনিবেশিক আমলের সব আইনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যুগোপযোগী করা হবে। মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রতা কমাতে বিচারক এবং আদালতের সংখ্যা বাড়ানোসহ মামলার নথিপত্রকে ডিজিটাল করা এবং মামলার অগ্রগতি অনলাইনে ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

৫. সরকারি সেবায় কাগজ, সময় এবং সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজন কমিয়ে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স চালুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

৬. ঔপনিবেশিক আমলের ১৮৬১ ও ১৮৯৮ সালের পুলিশ আইন যুগোপযোগী করা হবে। একটি স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা হবে।

৭. আমরা স্থানীয় পর্যায়ে শাসন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে গ্রাম পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।

৮. নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা করপোরেশনের কাছে যাতে বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেন কুক্ষিগত না হয়, তার আইনি কাঠামো তৈরি করা হবে।

৯. ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড সিস্টেম চালু করা হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক নাগরিকের একটি ইউনিক হেলথ আইডির ব্যবস্থা করা হবে।

১০. প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে মানসম্পন্ন গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি করা। বাংলা মাধ্যম, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ বিদ্যমান সব ধরনের শিক্ষার মাধ্যম ও পদ্ধতিগুলোর একটি যৌক্তিক সমন্বয় করা হবে।

১১. বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণায় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগে ৫০ বছর মেয়াদি বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

১২. ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা রক্ষা করা হবে।

১৩. নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে নিম্নকক্ষে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।

১৪. মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি নির্মাণ করা হবে।

১৫. কর্মক্ষেত্রে প্রায়োগিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষাজীবনে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেতনভুক্ত ইন্টার্নশিপের সুযোগ সম্প্রসারণ করা হবে।

১৬. রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে আমরা বিভিন্ন দেশ ও ব্লকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করা হবে।

১৭. টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে।

১৮. শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য ‘স্থায়ী শ্রম কমিশন’ গঠন করা হবে।

১৯. প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।

২০. নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত সামাজিক আবাসন ও এলাকাভিত্তিক বাড়ি ভাড়া নীতি কাঠামো তৈরির মাধ্যমে শহরগুলোকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলা হবে।

২১. আবহাওয়া ও দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্ক বানানো হবে।

২২. প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার, দূতাবাস ও বিমানবন্দরগুলোতে হয়রানিমুক্ত সেবা, জরুরি সহায়তা তহবিল, দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল সরকারি সেবা নিশ্চিত করা হবে।

২৩. সীমান্ত হত্যা বন্ধে ও আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বোচ্চ পর্যায়ে দৃঢ় ভূমিকা নেওয়া হবে এবং

২৪. অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের সমন্বয়কারী আকরাম হোসেন, যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আওয়াল, এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম ফকির প্রমুখ।

আগামীকাল জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামীকাল জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামীকাল জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টাপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা...

নতুন ভোটারের তথ্য সংশোধনে ১১ দিন সুযোগ দিল ইসি

নতুন ভোটারের তথ্য সংশোধনে ১১ দিন সুযোগ দিল ইসি

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে ১১ দিনের জন্য সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে ১০ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা...