ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিল না। এই অভিযোগ করেছে ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে এটাসহ মোট ১১টা অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অন্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে অধিকাংশ পোলিং অফিসারের ন্যূনতম ধারণা না থাকা, ভোটারদের নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ, ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকা, ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি।

৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি–জিএস–এজিএসসহ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জিতেছে। ডাকসুর কোনো পদে জিততে পারেনি ছাত্রদল।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে একটি বিশেষ মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে তাঁদের (ছাত্রদল) শিক্ষার্থীদের সামনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর তাঁরা নানা অনিয়ম দেখেন। তাঁরা নিয়ম মেনে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেসবের সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়।
১১ অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশাসন নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের (ছাত্রদল) জায়গা থেকে নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় তিনি ১১টি অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগগুলো হলো—
১. ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ, ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে দেওয়াসহ নানা জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালে গণমাধ্যমে এসেছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাসহ অধিকাংশ প্যানেল ও একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটার উপস্থিতির তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। ঢাবি প্রশাসন সে বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কালক্ষেপণ করছে।
২. ২০১৯ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর ছিল না। ফলে ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এ ছাড়া ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত-ব্যবহৃত-বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোট গ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। বারবার জানতে চাওয়ার পরেও এ-সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টদের জানানো হয়নি। ফলাফল প্রকাশের পর উল্লিখিত অভিযোগগুলো নিয়মানুযায়ী চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে ব্যালট পেপার–সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে।
৩. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতিমধ্যে এসেছে। ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিল না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
৪. ডাকসু নির্বাচনের চার দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিনসহ সফটওয়্যার নির্ভুলতা-বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক-টেকনিশিয়ান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভোটার ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। ভোট গণনার বিষয়ে ইতিমধ্যে নানান অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে। কিন্তু একটি কার্যকর গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি হতো না।
শেয়ার করুন :










