বিদ্যুৎ সমিতির সংস্কার ও পেশাগত সমস্যার সমাধানের কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করেনি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এমনকি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার, চাকরি থেকে বরখাস্ত ও হয়রানিমূলক সংযুক্তি অব্যাহত রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এমন অবস্থায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গত ১৭, ২৭ ও ২৮ আগস্ট তারিখের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক বার্তায় এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন।
বার্তায় বলা হয়, সরকারের লিখিত আশ্বাসে আরইবি-পিবিএস সিস্টেম সংস্কার আন্দোলন গত ৫ জুন স্থগিত করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে আরইবি-পিবিএস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় কোম্পানি গঠনের সুপারিশ প্রণয়ন এবং সব চুক্তি ভিত্তিক বা অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণ, মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল, সব সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত এবং অন্যায়ভাবে বদলিকৃতদের পদায়নের লক্ষ্যে পৃথক দুটি কমিটিও গঠন করা হয়।

গত ২৩ অক্টোবর সরকারের উদ্যোগে বিদ্যমান সংকট নিরসনের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সভাপতিত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। উক্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ আট মাস পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সরকারের নির্দেশনায় প্রতিবেদন দাখিল হলেও অদ্যাবধি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া গঠিত উচ্চ পর্যায়ের দু’টি কমিটির কার্যক্রমের তিন মাস অতিক্রম হলেও সহজে ও স্বল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য কোনো বিষয়েরই দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় পুনরায় সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
বার্তায় আরো বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের লিখিত আশ্বাসের পরও মামলার ক্ষেত্রে কোনো সংবেদনশীলতা না দেখিয়ে বরং বিপরীত মুখী আচরণ করা হচ্ছে। গত ৬ আগস্ট জামিন বাতিল করে এক কর্মকর্তাকে পুনরায় গ্রেপ্তারপূর্বক কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ জুলাই ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লাইনক্রুদের বদলির বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কমিটি কর্তৃক সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত আরইবি তা বাস্তবায়ন করেনি। বিদ্যুৎ বিভাগের কমিটির কার্যক্রম চলমান অবস্থায় আরইবি-সমিতি যৌথভাবে সব কার্যক্রম যেমন স্টোর ইনভেন্টরি, কারিগরি সভা, উপকেন্দ্র ডিজাইন, টেন্ডার ওপেনিং ও মূল্যায়ন, সরকারি এজি অডিট, থার্ডপার্টি সিএ ফার্ম অডিট, সমিতির নিজস্ব ইন্টারনাল অডিট, মালামাল বরাদ্দ ও পরিবহন, ভার্চুয়াল সভাসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকলেও আরইবি কর্তৃক কিছু সমিতিতে বেনামি চিঠির তদন্ত ও হয়রানির উদ্দেশ্যে এবং মনিটরিং এর নামে ইন্টারনাল অডিট পরিচালনা শুরু করে; সমিতির পক্ষ হতে এই ধরনের হয়রানিমূলক কার্যক্রম না করার জন্য ইতঃপূর্বে অনুরোধ করা হয়েছিলো।
গত ৮ আগস্ট আরইবি-সমিতি-সেনাবাহিনীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এরূপ হয়রানি মুলক অডিট কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও আরইবি কর্তৃক সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মনিটরিং এর নামে এমন হয়রানিমূলক অডিট ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয় বলে জানানো হয়।
আরইবি কর্তৃক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অপরদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমন-পীড়ন ও হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গত ১৭ আগস্ট তিনজন, গত ২৭ আগস্ট নয়জন এবং ২৮ আগস্ট সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কথায় কথায় বরখাস্ত, সংযুক্তসহ এই ধরনের দমন-পীড়নের ফলে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে লাইনক্রুদের বদলির বিষয়ে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং অপেক্ষাকৃত সহজ এবং স্বল্প সময়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয়— বিশেষ করে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, যোগদান করতে না পারা ৫ জন লাইনক্রুর বিষয় নিষ্পত্তি, সব হয়রানিমূলক বদলি আদেশ পুনর্বিবেচনা, সাময়িক বরখাস্ত ও সংযুক্তদের পদায়ন, মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার ও লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিতকরণ ইত্যাদি বিষয়ের আশু নিষ্পত্তি প্রয়োজন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ১৭, ২৭ ও ২৮ আগস্টে হয়রানিমূলকভাবে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বরখাস্ত আদেশ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।
শেয়ার করুন :










