বুধবার , ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ

ট্রাম্পের মতো ‘কালসাপের’ সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্ভব নয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে যত কালি খরচ হয়েছে, ততটা কালি কবিতার প্রতি তার প্রেম নিয়েও খরচ হয়নি। অথচ অন্তত একটি কবিতা আছে যেটিকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন এবং নিয়মিত উল্লাসিত জনতার সামনে আবৃত্তি করেন। গত মাসে হোয়াইট হাউস সেটিকে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও রূপান্তর করেছে। নাম ‘দ্য স্নেক’, এটি মূলত অস্কার ব্রাউন জুনিয়রের লেখা একটি গান।

এই কবিতা ট্রাম্পের কাছে যতটা সম্ভব কোনো মতবাদ বা নীতিতে পরিণত হয়েছে।

কবিতার শুরু হয় একটি অর্ধেক-বরফ জমা সাপ দিয়ে। কবিতাটি এরকম— ‘শিশিরে ভিজে কাঁপছে’ আর উষ্ণতার জন্য ভিক্ষা চাইছে একটি সাপ। তার আবেদন মেনে নেয় এক ‘দয়ালু নারী’; সে তাকে মোটা সিল্কের কম্বলে জড়িয়ে দিল, আগুনের পাশে রাখল, সঙ্গে মধু আর দুধও দিল।

তার ‘সুন্দর ত্বক’ ছুঁয়ে আদর করতে করতে ওই নারী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু ‘কৃতজ্ঞতার’ বদলে সাপটি তাকে এক ভয়ঙ্কর ছোবল ছিল।

এই ছন্দগুলোই ট্রাম্পবাদের সারমর্ম: বাইরের কাউকে খুব বেশি আপন করে নিও না, নইলে সে বিষাক্ত দংশনের মাধ্যমে দিয়ে প্রতিদান দেবে। আলিঙ্গন নয়, শুধু শোষণ।

এভাবেই তিনি ব্যবসা, রাজনীতি এবং অবশ্যই অভিবাসনকে দেখেন। হোয়াইট হাউসের ভিডিওতে তার আবৃত্তির উপর ওভারলে করা ছিল ‘হাতকড়া পরা বাদামী ত্বকের মানুষদের টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য’।

এই সপ্তাহে জাতিসংঘে তার বিস্ময়কর ভাষণ শোনার সময় আমার আবার দ্য স্নেক-এর কথা মনে পড়ল। এটি ট্রাম্প আর ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের নিখুঁত চিত্র – যেখানে ট্রাম্পই হলো বিষাক্ত সাপ।

গত সপ্তাহে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সবচেয়ে সম্মানিত অতিথি, উইন্ডসর ক্যাসেলে ভোজে অংশ নিলেন এবং রাজা চার্লস তাকে অভিহিত করলেন ‘নিকটাত্মীয়’ হিসেবে।

একবার দেশে ফিরে এসেই ট্রাম্প তার আতিথেয়তাকে ছুরিকাঘাতে বিদ্ধ করে বললেন – ‘আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী শুনছেন’, এবং যুক্তরাজ্যকে সেই পুরোনো দুনিয়ার ‘নরকে যাওয়া’ দেশগুলোর কাতারে নামিয়ে আনলেন।

এসব দেখে আমার মনে পড়ল কবিতাটির শেষ দুই লাইন। যেখানে নারী ওই সাপকে বললেন, ‘তুমি আমাকে কেন কামড়ালে?
তুমি তো জানতেই তোমার কামড় বিষাক্ত, আর তোমার কামড়ে এখন আমি মরতে যাচ্ছি।’

প্রায় এক বছর ধরে স্টারমার ট্রাম্পকে যতটা সম্ভব কাছে টেনে রেখেছেন, যার মধ্যে নজিরবিহীন তার দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর; একটি দুর্গে রাতযাপন ও চেকার্সে এক দিন কাটানো, রাজপরিবারের সঙ্গে ফটোসেশন—সবই কেবল ডলারের আশায়। কম শুল্ক আর বেশি বিনিয়োগই স্টারমারের আরওআই (রিটার্ন অন ইনগ্রেটিয়েশন)। গত সপ্তাহে তিনি পেলেন সবচেয়ে বড় পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য টেক চুক্তি। এটিকে ‘রেকর্ড-ব্রেকিং’ বিনিয়োগ বলে ঘোষণা দিল ডাউনিং স্ট্রিট।

‘একেবারে বিস্ময়কর বোঝাপড়া’ বলে এর সঙ্গে একমত হলেন বিবিসির প্রখ্যাত বিজনেস এডিটর সাইমন জ্যাক। প্রস্তুত থাকুন, আগামী সপ্তাহের লেবার সম্মেলনে এটি প্রচণ্ডভাবে প্রচারিত হবে – আর সংবাদকর্মীরা তাতে মাথা নেড়ে সায় দেবে। তারা তো গত সপ্তাহে পরিসংখ্যানের ভেতরে ঢুকে প্রকৃত অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগত বিশদ নিয়ে আলোচনা না করে মেলানিয়ার টুপি দেখতে বেশি সময় কাটিয়েছেন।

কিন্তু লেবার সদস্য আর অন্য ভোটাররা যদি জানতে পারত তাদের নামে আসলে কী সই হয়েছে, তবে খুশি নয়, ক্ষুব্ধই হতো। প্রকৃত সত্যের কাছাকাছি ছবি হলো—তারা যেন কল্পনা করে তারকাখচিত আমেরিকান পতাকার চামড়ার সাপ আপনার ভূমি, আপনার ডেটা, আপনার পানির যোগান আর বিদ্যুতের খুঁটি আঁকড়ে ধরে আছে—সবই নাকি আপনার মঙ্গলের জন্য।

শুধু তাই নয়, এম ২৫-এর ধারে গুগলের জমকালো উদ্বোধন বা নর্থাম্বারল্যান্ডে ব্ল্যাকস্টোনের বিনিয়োগের মতো এক বছরের বেশি আগে ঘোষিত প্রকল্পগুলোকে আবারও নতুন করে গোনায় ধরে দেখানো হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের এটাই নোংরা মানদণ্ড।

আরো লক্ষণীয় হলো স্টারমারের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে মাথা নত করে একে ‘জীবন বদলে দেওয়া’ বলে ঘোষণা করা। বেশিরভাগ ব্রিটিশ অবশ্য ভিন্নভাবে দেখবে। গ্লেজার পরিবার, ব্ল্যাকস্টোন আর ম্যাকুয়ারি – এগুলো সবই ‘অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ’-এর উদাহরণ। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক, সাউদার্ন ক্রস কেয়ার হোমসের রোগী আর থেমস ওয়াটারের গ্রাহকরা এমপিদের ভালোভাবেই বলতে পারবে এগুলো কেমন ফল দিয়েছে।

ওটার মতো ৩১ বিলিয়ন পাউন্ডের টেক বিনিয়োগেও একই পরিণতি হবে। হোয়াইটহলের নিজস্ব প্রকাশনা স্পষ্ট করেছে যে, এই মার্কিন অর্থের বেশিরভাগ নতুন ব্যবসা বা ঝকঝকে অফিসে যাবে না, বরং ডেটাসেন্টারে – যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জন্য একেবারেই কেন্দ্রীয়, অথচ ব্রিটিশ রাজনীতিতে খুব একটা আলোচনা হয় না। সরকার দাবি করছে এগুলোই হলো ‘এআই চালিত কারখানা’, কারণ ওয়েস্টমিনস্টারে ‘কারখানা’ মানেই উৎপাদন, মানুষ, চাকরি। অথচ ডেটাসেন্টার মোটেও তা নয়। এগুলো অনেকটা হাই-টেক গুদামঘরের মতো, যেখানে মানুষ নয়, মেশিন ভরা থাকে। এগুলো কিছু উৎপাদন করে না, শুধু সংরক্ষণ করে: আপনার আর আমার ডেটা। তেমন চাকরিও দেয় না।

উত্তর নর্থাম্বারল্যান্ডের ব্ল্যাকস্টোনের নতুন স্থাপনার পরিকল্পনা নথি দেখুন: পাঁচ লক্ষ বর্গমিটারের বেশি জায়গায় সর্বোচ্চ ১০টি ডেটাসেন্টার। ব্ল্যাকস্টোনের হিসেব মতে, নির্মাণকাজে শীর্ষ সময়ে ১,২০০ কর্মী লাগবে এবং সেটিও ১০ বছরের জন্য।

‘চাকরি, চাকরি, চাকরি,” প্রতিশ্রুতি দিলেন স্টারমার। কিন্তু এটি কি সত্যিই? বাস্তবিক অর্থে এই কাজ শেষ হওয়ার পর, পুরো বিশাল কমপ্লেক্সে প্রতিটি ডেটাসেন্টারে লাগবে মাত্র ৪০ জন কর্মী। তখন পর্যন্ত এই লেবার নেতা অনেক আগেই বিদায় নেবেন।

স্থায়ী কর্মীরা কী করবে জানতে চাইলে ব্ল্যাকস্টোনের একেবারেই সোজাসাপ্টা উত্তর। তারা নতুন ডেটা অর্থনীতির সেনাপতি নয়, বরং নিম্নস্তরের সিপাহসালার – সেই অনুযায়ীই তারা মজুরি পাবে। তাদের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ, সহায়তা আর নিরাপত্তা।

এই জমি একসময় ব্রিটিশভোল্ট কারখানার জন্য নির্ধারিত ছিল। তখন বরিস জনসন তার সবচেয়ে উৎসাহী অবস্থায় ছিলেন। এখন তা এক বিশাল ফাঁকা জায়গায় পরিণত হবে। এই হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টারগুলো মাইক্রোসফট, গুগল এবং অন্যান্য মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য অপরিহার্য। মালিকানা, পরিচালনা ও সরঞ্জাম আসবে সিলিকন ভ্যালি থেকে আর আমাদের দেশে আসা অর্থের বড় অংশ আবার পশ্চিমে চলে যাবে। মূল ব্যয় আসলে ডেটা সেন্টারের ইটপাথর নয়, ভেতরে বসানো এনভিডিয়া চিপস।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এআই বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া রিক্যাপ বলেন, ‘এগুলো ব্রিটিশ ভূমিতে আমেরিকান সামরিক ঘাঁটির সমতুল্য।’ এগুলো এমন এক পরিসর, যেখানে কোনো নজরদারি নেই (সরকার জানেই না ব্রিটিশ মাটিতে মোট কতটি ডেটা সেন্টার আছে)।

এসব দেখে আমার মনে পড়ছে স্নেক কবিতার সেই লাইন, ‘‘আমাকে আশ্রয় দাও, হে কোমল হৃদয়ের নারী/আমাকে আশ্রয় দাও, খোদার দোহাই’ বলে নিশ্বাস ফেলে বলল সেই হিংস্র সাপ।’’

সিলিকন ভ্যালি আগামী দিনের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ দখল করছে। সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন: লন্ডনের পূর্বাঞ্চলীয় টাওয়ার হ্যামলেটস বরো ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, ডেটা সেন্টারের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সংযোগের কারণে বিদ্যুৎ ও পানির জোগান বাড়তি চাপ নিতে পারে, যা বড় পরিসরে বাড়ি নির্মাণ অন্তত ১০ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

গত সপ্তাহে সতর্ক করে নিক ক্লেগ বলেছেন, যুক্তরাজ্য এক ‘ভ্যাসাল স্টেটে’ পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ২০১০ সালের পর এই প্রথম আমরা সবাই নিকের সঙ্গে একমত হতে পারি। কারণ, আমরা নিজেদের বেঁধে দিচ্ছি সিলিকন ভ্যালির এআই অবকাঠামোর সঙ্গে। আমরা তাদের ডেটা সেন্টার, তাদের ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে যাচ্ছি। আমাদের তথ্যভিত্তিক অর্থনীতির পাইপলাইন ও সংযোগব্যবস্থা মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাম্পের আমেরিকা।

যখন প্রেসিডেন্ট স্ট্যানস্টেডে অবতরণ করলেন, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক ডেপুটি গভর্নর জন কানলিফ তখন সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজেই আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে তার আধিপত্যকে ‘অস্ত্রে পরিণত’ করতে পারে এবং হোয়াইট হাউসের হুকুম অমান্যকারী যেকোনো দেশকে এক ঝটকায় ‘কিল সুইচ’ টিপে অচল করে দিতে পারে। কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতে না চায় বা ডেনমার্ক যদি গ্রিনল্যান্ডকে ধরে রাখার ব্যাপারে অনড় থাকে, তাহলে তাদের ব্যাপারে ট্রাম্প এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।

আর যদি এখনো মনে করেন ট্রাম্প বিশাল আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে তার রাজনৈতিক ইচ্ছার সামনে নতজানু করতে পারবেন না, তাহলে ট্রাম্পের সমালোচনা করে চাকরি হারানো উপস্থাপক জিমি কিমেলকেই এ বিষয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করে দেখুন। জবাবে তিনি হয়তো স্নেক কবিতার লাইন আওড়াবেন, ‘চুপ করো নির্বোধ নারী, তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি এক সাপ, তবু কেন আশ্রয় দিলে।’

 

চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা

শাপলা কলি প্রতীকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে এনসিপি : নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‌‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলটির...

চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা

এনসিপিকে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক বরাদ্দ দিল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি ও বাংলাদেশ...

Ad For Sangbad mohona